ধরুন সামনে কোথাও দৃশ্যনীয় জায়গাতে ঘুরতে যাবেন। বেশ কিছু টাকা হলে ঘোরাঘুরিটা ভালোই হতো। কিন্তু কিভাবে? বাবা যে টাকা পাঠায় তা দিয়ে ভার্সিটি ফ্রি এবং হোস্টেল ফ্রি দিতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়। আবার বারবার ফোন দিয়ে বলে বাবা এবার কিছু একটা করা চাই। অন্তত নিজের পকেটের খরচ নিজেই চালাও।
আর ঠিক এরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার আপনার ম্যাক্সিমাম লোকের ই। প্রত্যেকবার বাসা থেকে টাকা নিয়ে ভাবি এই মাসের মধ্যেই একটা টিউশনি ম্যানেজ করব। কিন্তু বর্তমান বাজারে চাকরির চাইতে টিউশনি যেন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। কোনভাবেই একটা টিউশনি ম্যানেজ করা হয়ে ওঠেনা তাই না?
আর ঠিক এভাবেই পরের মাসের টাকা নেয়ার সময় আবার চলে আসে, তাই আজ আমরা এমন কিছু সমাধান নিয়ে আলোচনা করব, যে কাজগুলো করলে আপনি ছাত্র জীবনে শুধু পকেট মানি খরচ না বাসার খরচটাও টুকিটাকি চালাতে পারবেন। আপনি যেহেতু ছাত্র তাহলে আপনার মধ্যে অবশ্যই দুইটি গুনাগুন আছে:-
- শক্তি
- এবং কর্ম দক্ষতা
কিন্তু এর মাঝে সেই জিনিসটার লিমিটেশন আর তা হলো টাকা। আজ আমরা কিছু ইফেক্টিভ সমাধান নিয়ে কথা বলব, যেগুলোতে আপনি কোন ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া অর্থাৎ শূন্য হাতে শুরু করতে পারবেন। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক সেই উপায় গুলো সম্পর্কে
১। ইউটিউব
ইউটিউব হলো বর্তমান বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। ধরুন আপনি ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখছেন, তারমানে আপনি সেই ভিডিওর ভিউয়ার। আপনার কি কখনো চিন্তা হয়েছে , ভিডিও দেখার সময় আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপ স্ক্রিনে যে বিজ্ঞাপন গুলো শো করে সেগুলোর কারণ কি? কেনইবা আপনাকে এই বিজ্ঞাপন গুলো দেখতে হচ্ছে?
হ্যাঁ আপনার এখানেই সমাধান লুকিয়ে আছে, ইউটিউব হলো ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম যাদের নিজস্ব কোন কনটেন্ট নেই। সারা বিশ্বে অসংখ্য ভিডিও ক্রিয়েটর তাদের ভিডিও গুলো আপলোড করে থাকে। আজ যে ভিডিও গুলোর মধ্যে youtube বিজ্ঞাপন বসাচ্ছে। আর বিজ্ঞাপন দাতা youtube কে যে টাকা পে করছে। সেটার একটা অংশ ইউটিউব ক্রিকেটারদের মধ্যে বিলিয়ে দেয় youtube। আপনাকে ভিডিও ক্রিয়েটর হওয়ার কথাই বলছি।
প্রশ্ন উঠতে পারি কি লাগবে ইউটিউব করতে?
এর উত্তর হল তেমন কিছুই লাগবে না, জাস্ট একটা মোবাইল বা ক্যামেরা আর ইন্টারনেট কানেকশন। হতে পারে সেটা ব্লাড ব্যাংক কিংবা মোবাইল ডাটা। youtube এর ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপ থেকে সিম্ফলি একটা চ্যানেল তৈরি করে নিবেন। চ্যানেল না তৈরি করতে পারলে ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও পাবেন কিভাবে একটি পরিপূর্ণ চ্যানেল ক্রিয়েট করতে হয়, সেই ভিডিও গুলো দেখে আপনি চ্যানেল তৈরি করে নিবেন।
এবার আপনার ভিডিও আপলোড করার পালা। কিন্তু কি ভিডিও আপলোড করবেন সেটা নিয়ে ভাবছেন? হ্যাঁ এটা আপনাকে চিন্তা করে বের করতে হবে। যে কাজটি আপনি করতে ভালোবাসেন সেটা হতেই পারে আপনার ভিডিওর বিষয়। ফর এক্সাম্পল আপনি ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন, তাহলে যেখানে যাবেন মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে পুরো জার্নিটা ভিডিও করে নিবেন। যা ট্রাভেল ব্লগ নামে পরিচিত এবং ইউটিউবে এটা ভীষণ জনপ্রিয় কন্টেন্ট।
এছাড়াও আপনি যদি ভালো মিউজিক করেন সেটার উপর ভিডিও আপলোড করেও জনপ্রিয় হতে পারেন। সেই সাথে বন্ধু বান্ধব নিয়ে ছোট ছোট শর্ট ফিল্মও তৈরি করতে পারেন। স্ক্রিন রেকর্ড করে মোবাইল এবং ল্যাপটপে যে কোন সমস্যার সমাধান ও করতে পারেন। সবচাইতে বড় কথা হলো যে বিষয় নিয়ে আপনি ভিডিও বানান না কেন সেটার উপর আপনার অগাধ ভালোবাসা এবং ভালোলাগা থাকতে হবে। তাহলে আপনি খুবই দ্রুত ইউটিউবে সাকসেস হতে পারবেন।
ধরুন ভিডিও আপলোড করছেন দেখবেন একটা সময় এসে আস্তে আস্তে ভিউ এবং সাবস্ক্রাইবার আসতে শুরু করেছে আপনার চ্যানেলে। একটা সময় এসে আপনি মনিটাইজেশন অন করে ফেলবেন। এবং আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন আসবে যার মাধ্যমে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
এই বিষয়ে যদি আপনার আগ্রহ থাকে তাহলে গুগলে সার্চ করে আরো অনেক তথ্য জেনে নিতে পারেন। আমি শুধু আপনাকে একটি মাধ্যম বা ওয়ে-টা জানিয়ে দিলাম আর কি। মাসে বিশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করে, এর মানে বুঝতেই পারছেন এমাউন্ট টা কত ইউজ পরিমাণ?
২। ফ্রিল্যান্সিং
ফ্রিল্যান্সিং মানে হল মুক্ত পেশা, যেখানে থাকবে না আপনার কোন বস, যিনি আপনাকে একটু পর পর বলবে না। মিন্টু সাহেব ফাইলটা রেডি করেছেন? কি করেন সারাদিন ইত্যাদি ইত্যাদ। আপনি নিজের মতো ইচ্ছামত কাজ করবেন। আপনার কাজ করতে ইচ্ছা হলে করবেন আর না হলে করবেন না। কেউ আপনাকে কিছুই বলতে আসবে না।
সারাদিন ঘুমাবেন রাতে কাজ করে, ক্লাইন্টকে সাবমিট করবেন। আর এটার নামই মূলত ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অনেক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে তার মধ্যে
- upwork.com
- fiver.com
- freelancer.com
এই সমস্ত মার্কেটপ্লেস গুলো বাংলাদেশের তুমুল জনপ্রিয়। ক্লাইন্টরা এই সমস্ত প্ল্যাটফর্মে তাদের জবগুলো পোস্ট করে থাকে। আর আপনি বিট করার মাধ্যমে কাজগুলো পেতে পারবেন। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অবশ্যই ভালোভাবে দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং তারপর আপনাকে কাজ পাওয়ার জন্য এপ্লাই করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যে সমস্ত কাজ বেশি জনপ্রিয়:-
- গ্রাফিক ডিজাইন
- ওয়েব ডেভেলপার
- ভিডিও এডিটর
- অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
এই কাজগুলো শিখে আপনি ফাইবার অথবা যেকোনো পছন্দের মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারেন। তবে কিছু কিছু কাজ আছে যা আপনি সামান্য কিছু স্ক্রিল অর্জন করলেই করতে পারবেন। যেমন:- কপিরাইটিং, ডাটা এন্ট্রি, এমনকি আর্টিকেল রাইটিং ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই ফ্রিল্যান্সিংও হতে পারে আপনার প্রেসিফ ইনকামের পথ। যেখানে আপনার রাজ্যে আপনিই রাজা।
৩। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ধরুন আপনার বন্ধুর একটা কোম্পানি আছে, তিনি আপনাকে অফার করলেন বিক্রি বাড়ানোর জন্য। তার পণ্যগুলো সম্পর্কে মানুষের জানাতে এবং সেই পণ্যগুলোর গুনাগুন তুলে ধরতে। এতে করে যে পণ্যগুলো আপনার রেফারেন্সে বিক্রি হবে, আপনার বন্ধু সেই পণ্যের মোট মূল্যের উপর ১০% টাকা আপনাকে দিবে।
এতে করে কি হলো? আপনার বন্ধুর বিক্রি বাড়লো আপনারও কিছু বাড়তি টাকা ইনকাম হল। জাস্ট মানুষকে জানিয়ে বা রেফার করে। হ্যাঁ মূলত এটাকেই এফিলিয়েট মার্কেটিং বলে।
বিশ্বের বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডগুলো তাদের প্রোডাক্টের অনেক বড় একটা অংশই যেমন amazon, aliba এবং বাংলাদেশের দারাজের মত অনলাইন মার্কেটে বিক্রি করে থাকে। আর এই প্রতিটি মার্কেট প্লেসেই এফিলিট প্রোগ্রাম রয়েছে। যদিও আমাদের দেশে amazon aphiliate অনেক জনপ্রিয়। সিম্পল ভাবে amazon.com থেকে এফিলিয়েট প্রোগ্রামার হিসেবে সাইন আপ করে। তারপর যে পণ্যের মার্কেটিং করবেন সেই পণ্যের মার্কেটিং করবেন সেই লিংকটা ফেসবুক প্রোফাইল, instagram profile, পেজ কিংবা ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে দিন।
আপনার বন্ধুদের কাছে যত বেশি আপনার শেয়ার করার লিংক রিচ করবে, আপনার মার্কেটিং করা পণ্যের বিক্রির চান্স বা সম্ভাবনা ততই বাড়বে। আর বুঝতেই পারছেন, আপনার লিংক এর মাধ্যমে বিক্রি যত বাড়বে আপনার ইনকাম তত হতে থাকবে। আমাদের বাংলাদেশেই অনেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার রয়েছে যাদের মাসিক ইনকাম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকারও বেশি।
তো পাঠক এই তিনটি বিষয় নিয়ে আরো রিসার্চ করুন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে যাবেন যা আপনার ভীষণ উপকারে আসবে ছাত্র জীবনে। ধৈর্য আর মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস রাখুন আপনিও আর টাকার জন্য বাবার আশায় বসে থাকবেন না। বরং মাকে একটা শাড়ি বাবাকে একটা পাঞ্জাবি আর আদরে ছোট বোনকে একটা জামা কিনে দেয়ার সামর্থ্য রাখবেন ইনশাল্লাহ। আপনার দেওয়া শাড়ি যখন আপনার মায়া পড়বে তখন কতইনা মধুর একটা ব্যাপার আপনার মধ্যে লক্ষ্য করা যাবে বলুন?
তো পাঠক চলুন জেনে নিই স্টুডেন্ট লাইফে ইনকাম করার আরো কিছু ভিন্ন ধার্মিক উপায়:-
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এ ছাত্র জীবনে আয় করার উপায় তুলনামূলকভাবে কমই আছে। যার অন্যতম কারণ আমাদের দেশের মানুষেরা ছোট ছোট কাজগুলোকে প্রায়ই অবজ্ঞা করেছেন।
কনো উন্নত দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে প্রায় প্রতিটি ছাত্র ই নিজের হাত খরচের টাকা কোন না কাজ করে নিজেই উপার্জন করে থাকে, তবে আমাদের দেশের চিত্র যে একেবারেই তেমন নয় সেটাও বলা যাবে না। কারণ আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা নিজের খরচ নিজেই বহন করছে ছাত্র থাকা অবস্থায়।
টিউশন করা
আমরা স্বাভাবিকভাবেই এটা জানি যে ছাত্র অবস্থায় সবচেয়ে বেশি যে কাজটি করা হয়ে থাকে তা হলো টিউশনি। টিউশন পরানো একদিকে যেমন আর্থিক সচ্ছলতা আনার কৌশল, অন্যদিকে এটা বেশ ভালো একটা জ্ঞান অর্জনের উপায়। যারা প্রতিনিয়ত পড়াশোনার মধ্যে থাকতে পছন্দ করেন তারা অবশ্যই এই কাজটি করতে পারেন।
এতে করে আপনার কিছু ইনকাম হবে সেই সাথে পড়াশোনার চর্চাটাও হবে। তাই আপনি চাইলেই টিউশান করেও ভালো পরিমাণ একটা ইনকাম করতে পারেন অফলাইনে।
পার্ট টাইম জব
শুনতে বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে তাই না? হ্যাঁ ছাত্র হিসেবে আপনি পার্ট টাইম জব বেছে নিতে পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে পার্ট টাইম জব করব কিন্তু কাজ কি হবে? পার্টটাইম জবের তালিকা চাইলে ওয়েবসাইটে দেখতে পারেন। বিভিন্ন জব পোর্টাল সাইট গুলো প্রায় পার্টটাইম জবের বিজ্ঞাপনকে থাকে, সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সাইট হল bdjob সেখানে গিয়ে দেখতে পারেন এখন কোন জবের পার্টটাইম অপরচুনিটি রয়েছে।
শোরুমের সেলসম্যান
ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে যারা মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট এ পড়াশোনা করছেন, বিশেষ করে তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ হচ্ছে বিভিন্ন শোরুমগুলোতে সেলসম্যানের কাজ করা। এতে একাডেমিক ব্যাপার গুলোর সাথে কাজের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। আর কাজ করতে ভালোও লাগে , তাছাড়া কেবল শোরুমগুলোতেই না, বরং প্রতিটি কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যা পরবর্তীতে নিজের সিবিতেও এড করা যাবে।
দক্ষতামূলক কোন কাজ করার মাধ্যমে আয় করতে চাইলে সেলসম্যান এর কাজটি ও ভেবে দেখতে পারেন। এই কাজটিও বেশ ভালো।
শেষ কথা:- পাঠক আমরা সবসময় চেষ্টা করি আমাদের পোস্ট পড়ে যেন আপনার সামান্য পরিমাণ হলো উপকারে আসে এবং সেই ধারাবাহিকতাই আজকেও আমরা চেষ্টা করেছি। স্টুডেন্ট লাইফে ইনকাম করার প্রায় প্রত্যেকটি ধাপ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার। আশা করছি আপনি এই একটি মাত্র পোস্ট পড়েই বুঝতে পেরেছেন স্টুডেন্ট লাইফে ঠিক আপনি কি করে ইনকাম করতে পারবেন। এরপরও যদি কোন বিষয়ে সাহায্য দরকার হয় তাহলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করবেন আমরা চেষ্টা করব আপনার কমেন্টের রিপ্লাই দেয়ার জন্য এবং আপনাকে হেল্প করার জন্য।
পোস্টটি যদি আপনার হেল্পফুল মনে হয়েই থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার ফ্রেন্ডদের কাছে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। এবং তাদেরকেও এই বিষয়গুলো জানার একটা সুযোগ তৈরি করে দিন। আজকের মত আমি এখানেই বিদায় নিচ্ছি দেখা হবে আবারও ইনকাম রিলেটেড পরবর্তী কোন আর্টিকেলে ততক্ষণ পর্যন্ত নিজের খেয়াল রাখুন এবং ভালো থাকুন আল্লাহ হাফেজ।